সালভিয়া শীত মৌসুমের মনমাতানো ফুল। গাছ দুই ইঞ্চি থেকে দুই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। জোড়ায় জোড়ায় লম্বা বোঁটার মাথায় পাতা হৃদয়াকৃতি। পাতার কিনারায় মিহি নকশা করা। এর লম্বা পুষ্পমঞ্জরি গাছের চেয়েও বড় হয়। পাতাহীন পুষ্পমঞ্জরি ফুলকলিতে ভরা থাকে। নিচের দিক থেকে ফুল ফুটতে ফুটতে ওপরের দিকে যায়। মজার বিষয় হলো সালভিয়ার ফুল, কলি, মঞ্জরি সবই একই রঙের। দেখে মনে হয় একটি ফুলের তোড়া।
সাধারণত টকটকে লাল সালভিয়াই দেখা যায় বেশি। খয়েরি, ভায়েলোট, ঘি-সাদা ফুলের দেখা কদাচিৎ মেলে।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
গাছের অবস্থান নির্ণয়ঃ কোন কোন গাছ বেশি রোদ পছন্দ করে (সূর্যমুখী, গাঁদা ফুল) কোন গাছ আধা ছায়ায় ভালো হয় (পিস লিলি,মোরগফুল), আবার কোনো গাছ ছায়া পছন্দ করে (ওকলিফ হাইড্রেনজাস, ইম্পেইশেন্স)। এজন্য কাঙ্ক্ষিত গাছ থেকে বেশি সুফল পেতে রোদের/আলো-বাতাস প্রাপ্তি অবস্থা বুঝে গাছের অবস্থান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ইনডোর প্লান্ট এর ক্ষেত্রে ঘরের আকৃতি ও ধরনের ওপর লক্ষ রেখে গাছ নির্বাচন করতে হবে এবং সূর্যের আলো একেবারেই পায় না এমন হলে সপ্তাহে অন্তত এক দিন গাছগুলোকে রোদে দিতে হবে।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ যে কোন চারা রোপণের পূর্বেই সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও যেখানে পানি না জমে এমন উঁচু জায়গা নির্বাচন করে জায়গাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সঠিক মাটি নির্বাচনের জন্য উপরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকে এ বিষয়ে ধারনা নেয়া যেতে পারে। টবে রোপণ করা গাছের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দেয়া ভাল, এতে গাছের শিকড় সহজে বাড়বে।
পানিঃ অতিরিক্ত পানি দেয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেশি পানি দেয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। এ জন্য গাছের গোড়া শুকালেই কেবল পানি দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই তাতে পানি দেয়া যাবে না। কিছু গাছ বেশি পানি গ্রহণ করে আবার অনেক গাছে পানি কম লাগে। বৃষ্টি বা নালায় জমে থাকা পানি গাছ বেশি পছন্দ করে। তবে সকাল বেলা গাছে পানি দেয়া উত্তম। গাছের পাতায় বেশি ধুলো জমলে পানি দিয়ে হালকা স্প্রে করে দেয়া যেতে পারে।
পোকা-মাকড় দমনঃ পোকা -মাকড় আক্রমনের প্রাথমিক অবস্থার শুরুতে সীমিত সংখ্যক পোকা বা তার ডিমের গুচ্ছ দেখা যায়। নিয়মিত রোপণ করা বা টবে রোপণ করা গাছগুলো পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা পোকার ডিমগুলো সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ভালো। পাতার নিচে ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্র পাতার বোটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জৈব পদ্ধতি অবলম্বনে গাছকে পোকার হাত থেকে নিরাপদ রাখা যেতে পারে। কীটনাশক ব্যবহার কালে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার টকসিসিটি কম সময় থাকে।
আগাছাব্যবস্থাপনা ও অঙ্গ ছাঁটাইকরণঃ কাংখিত গাছকে সুষ্টুমত বাড়তে দেয়ার জন্য ক্ষত ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দেবা প্রয়োজন। ধারালো সিকেচার বা বিশেষ এক প্রকার ছুরি দিয়ে অঙ্গ ছাঁটাই করতে হয়। ডাল কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁৎলে না যায়। এতে গাছে ছত্রাক রোগের আক্রমণ হতে পারে। গাছের নিচে ক্ষতিকর আগাছার কারনে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার প্রয়োগঃ গাছের সঠিক বৃদ্ধি ও কাঙ্খিত ফলাফল এর জন্য গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ধরার সময় সঠিক মাত্রায় জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ গাছের ক্ষেত্রেই ১৫ দিন বা এক মাস অন্তর অন্তর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
Reviews
There are no reviews yet.