লেটুস পাতার চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে রাখি!!
★ ভূমিকা:——
* লেটুস পাতার উপকারিতা অনেক। চাষী বা কৃষকদের অনেকেই এর সম্পর্কে সঠিক ভাবে তেমন কিছু জানে না। এমনকি এর খুঁজ খবরও ঠিক ভাবে নেই অনেকের কাছে। কারনটা মূলক এই শাক ও এর পুষ্টিগুন নিয়ে তেমন কোন প্রচার প্রচারনা নেই, যার দরুন গ্রামাঞ্চলে এই শাক অনেকটা অপরিচিতই রয়ে গেছে।
* শাকসবজি রান্না করতে গিয়ে আমরা এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট করে ফেলি। তবে কোনো কোনো শাকসবজি রয়েছে সেগুলো কাঁচা খাওয়া সম্ভব। লেটুস এমনি একটি শাক, যা সালাদ হিসেবে টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ এসবের সঙ্গে ব্যবহার হয়।
ফলে এর পুষ্টি থাকে অটুট। লেটুস বেশ পুষ্টিকর। মুখে রুচিও বাড়ায়।
★লেটুসের প্রতি ১০০ গ্রাম পাতায়………
ক্যারোটিন ৯৯০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন-বি ০.২২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-সি ১০ মিলিগ্রাম
শর্করা ২.৫ গ্রাম
আমিষ-২.১ গ্রাম
চর্বি ০.৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম এবং
লৌহ আছে ২৪ মিলিগ্রাম।
★ এত কিছু সত্ত্বেও এ দেশে লেটুস শাকের আবাদ খুবই সীমিত। অথচ প্রতিটি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় লেটুস পাতা চাষের রয়েছে যথেষ্ট সুযোগ। এতে পারিবারিক চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি বিক্রি করেও পাওয়া যাবে নগদ অর্থ।
=> চাষের সময়:——-
শীতপ্রধান দেশে সারা বছর এর চাষ হলেও এ দেশে কেবল রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় বীজ বোনা যেতে পারে।
=> জাত:——–
লেটুস শাকের বিভিন্ন জাত রয়েছে।
এসবের মধ্যে নিম্ন বর্নিত জাতগুলো উল্লেখযোগ্য:——
* বারি লেটুস-১
* বিগ বোস্টন
* হোয়াইট বোস্টন
* প্যারিস হোয়াইট
* গ্র্যান্ড ব্যাপিড
* নিউইয়র্ক-৫১৫
* ইম্পিরিয়াল-৫৪
* সিম্পসন
* কিং ক্রাউন
* কুইন ক্রাউন
* ডার্ক
* গ্রিন এবং
* গ্রেটলেক।
=> চাষের নিয়ম কানুন:——-
চাষের জন্য জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এসব জমিতে সরাসরি বীজ বোনা যায়। আবার বীজতলায় বপন করে উপযুক্ত বয়সের চারা(এক মাস বয়সের) মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব রাখতে হবে ৮ ইঞ্চি। এজন্য শতাংশপ্রতি বীজ দরকার ৪ গ্রাম করে। তবে বীজতলায় বীজ প্রয়োজন হয় ২০ গ্রাম। লেটুসের বীজ খুব ছোট। তাই বপনের সময় বীজের সঙ্গে মাটির কণা বা ছাই ব্যবহার করা উচিত।
=> সার প্রয়োগের পরিমাণ:——-
লেটুস শাক চাষে শতাংশপ্রতি নিম্ন প্রদত্ত পরিমাণে সার প্রয়োজন:—
গোবর ২০ কেজি
খৈল ৮০০ গ্রাম
ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম
টিএসপি ১০০ গ্রাম
পটাশ ১০০ গ্রাম।
★এগুলোর মধ্যে গোবর চাষের প্রথম দিকে এবং শেষ চাষের সময় টিএসপি ও পটাশ সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়।
★তবে ইউরিয়াকে সমান দু’ভাবে ভাগ করে দু’কিস্তিতে (চারার বয়স ১০ দিন এবং বয়স ২০ দিন) উপরিপ্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
=> কীভাবে পরিচর্যা করবেন:——-
আশানুরূপ ফলন পেতে জমিকে সর্বদাই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে সেচ দেয়া জরুরি। তেমনিভাবে পানি জমে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয়। প্রয়োজনে চারা পাতলা করা বাঞ্ছনীয়। এতে একদিকে যেমন গাছ ঠিকভাবে বেড়ে উঠবে, পক্ষান্তরে উত্তোলিত সবজি ব্যবহার করা যাবে।
=> বালাই দমন ব্যাবস্থাপনা:——-
★ রোগ:—-
লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে-গাছের পাতা নুইয়ে পড়া এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যাওয়া।এমন হলে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
★ পোকা:—–
পোকার মধ্যে জাবপোকা খুব ক্ষতিকর। এরা গাছের পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া পোকার মলদ্বার থেকে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়ে, যা পাতায় আটকে ‘সুটি মোল্ড’ নামে এক প্রকার কালো বর্ণের ছত্রাক জন্মায়। ফলে আক্রান্ত অংশের সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। তাই এদের দমন করতেই হবে। তবে পোকার সংখ্যা কম হলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা উত্তম। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ ছিটানোর ১৫ দিনের মধ্য সবজি খাওয়া উচিত নয়। এজন্য পারতপক্ষে কীটনাশক ব্যবহার না করাই উচিত।
=> ফসল সংগ্রহ:——-
চারা লাগানোর এক মাস পর লেটুস পাতা খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ওই সময় সম্পূর্ণ গাছ তোলাই উত্তম, তবুও বসতবাড়ির এক একটি গাছ থেকে সব পাতা না কেটে প্রয়োজন মত পাতা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা যেতে পারে। শতাংশপ্রতি এর গড় ফলন ৪০ কেজি৷ |
Reviews
There are no reviews yet.